পদ্মা সেতুর আদ্যোপান্ত



(Padma bridge) পরিচিতি:

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় নদী গুলোর একটি হচ্ছে পদ্মা নদী। পানি প্রবাহের বিবেচনায় অ্যামাজন নদীর পরে পদ্মা নদীর অবস্থান। পদ্মা নদী হিমালয়ে উৎপন্ন হয়়ে ভারতের উপর দিয়ে বাংলাদেশের রাজশাহী শহরে এসে পদ্মা নদী নামে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।


কেন করা হচ্ছে:-


পদ্মা নদী গোয়ালন্দে এসে যমুনার সাথে ও চাঁদপুরে এসে মেঘনা নদীর সাথে মিলিত হয়েছে। স্বপ্নটা ছিল দেশের  দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল কে অর্থনৈতিক  বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে দেশের প্রাণকেন্দ্র ঢাকার  কাছে নিয়ে আসা, দেশের  দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্র বন্দর মংলা ও বেনাপোল স্থলবন্দর এই দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে অবস্থিত। দক্ষিণ অঞ্চলের 21 জেলায় প্রায় তিন কোটি মানুষ বসবাস করে। এজন্য দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের ঢাকার সাথে যোগাযোগের প্রধান পথ মাওয়া জাজিরা এবং পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুট।


বর্ষা বা শীতকাল সবসময়ই এই দুই রুটে যানজট লেগেই থাকে। ফলে মানুষের মূল্যবান সময় ও সম্পদের অপচয় ঘটে। এর ফলে চরম দুর্ভোগ ও ক্ষতির মুখে পড়েন সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা। যার ফলস্বরূপ দেখা যায় দেশের দক্ষিণাঞ্চলে শিল্প কলকারখানা বিস্তার কেমন ভাবে হয়নি।


পরিকল্পনা:-


এ অবস্থা থেকে উন্নতির জন্য আওয়ামী লীগ সরকার  1997 সালে পদ্মা সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা করে। 2004 সালে জাপান সরকারকে অনুরোধ করা হয় পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য সম্ভাব্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য তারা মাওয়া ঘাট থেকে পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য সুপারিশ করে এবং দ্বিতল বিশিষ্ট সেতু নির্মাণের জন্য বলে। যার নিচ  দিয়ে ট্রেন চলবে এবং ওপর দিয়ে অন্যান্য যানবাহন। মুন্সীগঞ্জের মাওয়া থেকে শরীয়তপুরের জাজিরা পর্যন্ত হবে সেতু তৈরি হবে।


গঠন:



সেতুটির দৈর্ঘ্য হবে 6.15 কিলোমিটার। সেতুর পিলারের উপর বসবে স্টিলের স্প্যান যার ভিতর দিয়ে চলবে ট্রেন, স্প্যান উপর থাকবে সড়ক যার উপর দিয়ে সাধারন যানবাাহন চলবে। সেতুতে পিলার হবেে 42 টি। একটি পিলার হতেে অন্য পিলারের মাঝের দৈর্ঘ্য হবে 150 মিটার। 42 টি পিলারের উপর 41টি স্প্যান বসিয়ে তৈরি করা হবে সেতুটি। সেতুটির প্রস্থ হবে 18.3  মিটার।



নির্মাণ ব্যয় হবে প্রায় 30 হাজার 193 কোটি টাকা। ভূমিকম্প সহনশীলতা হবে রিকটার স্কেলে 9। সেতুর আয়ুষ্কাল হবে 100 বছর। সেতুটি 4টি লেন থাকবে। মোট পাইলস 294 টি। সড়ক ভায়ড্যাক্ট  13.148 কিলোমিটার রেল ভায়ড্যাক্ট 0.532 কিলোমিটার।



সেতুর নির্মাণ কাজে সহযোগিতা করতে চাইল জাপান পাশাপাশি পাশাপাশি বিশ্বব্যাংক ও এডিবি কিন্তু দুর্নীতির অভিযোগে বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন থেকে বেরিয়ে গেল। সেই সময় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিলেন নিজ অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণের কথা।


কর্মযজ্ঞ:


শুরু হলো পদ্মা সেতু নির্মাণের মহাযজ্ঞ। পদ্মা নদীতে ভাসতে দেখা গেল বিশাল বিশাল আকার এর ক্রেন ও অন্যান্য যন্ত্রপাতিবাহি যান। জার্মানি থেকে নিয়ে আসা হল বিশাল আকার হাতুড়ি বা হেমার যেটি 120 মিটার এর পাইলস গুলোকে হাতুড়ি দিয়ে মাটির ভিতরে বসিয়ে দিচ্ছে। এই যন্ত্রটি একবারে আড়াই হাজার টন বল প্রয়োগ করতে পারে এবং এই বলপ্রয়োগ করে পিলার গুলো পোঁতা  হচ্ছে। এভাবে পাইলস গুলোকে মাটির ভিতরে পুঁতে দিয়ে, 6 টি বা 7টি পাইলস নিয়ে তার উপর তৈরি করা হচ্ছে এক একটি স্তম্ভ পরবর্তীতে স্তম্ভের উপর স্প্যান গুলো বসবে।



পদ্মা সেতুর পাশে চলছে সেতুর জন্য পাইলস ও অন্যান্য অংশ তৈরীর কাজ। হাজার হাজার শ্রমিক বিরাট কাজ করে চলছে। পদ্মা সেতু চাইনিজ কোম্পানির মাধ্যমে নির্মিত হচ্ছে। ফলে অনেক চাইনিজ ইঞ্জিনিয়ারা ও এখানে বাস করছে। সেতু নির্মাণের ফলে দেশের অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে।



পদ্মার জাজিরা প্রান্তে চলছে কংক্রিটের ব্লক তৈরির কাজ। পদ্মার দুপাশে প্রায় সাড়ে 14 কিলোমিটার জুড়ে বসবে ব্লকগুলো। প্রমত্তা পদ্মা কে শাসন করার জন্য লাগবে শুধু 38 লাখ টন পাথর ও ব্লক লাগবে এক কোটি 33 লাখ আর জিও ব্যাগ লাগবে পৌনে দুই কোটি। পদ্মার দুই প্রান্তের 12 কিলোমিটার সড়ক এটিকে জাতীয় নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত করবে। সেতুর কাজ করার জন্য নদীর দু'পাশের 2693 হেক্টর জমি দরকার ছিল। যার 95 ভাগ জমি এর মধ্যে সরকার অধিগ্ৰহণ করেছে।



ক্ষতিগ্ৰস্তদের পূর্নবাসন:-


সেতু নির্মাণ কাজের ফলে 80 হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদেরকে  পুনবাসন করা হয়েছে। যার ফলে তারা বাড়ির জমি ও থাকার জায়গা পাচ্ছে।


এই সেতু নির্মিত হলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের ব্যাপক উন্নতি হবে। তারা দ্রুত রাজধানী শহর ঢাকার সাথে যোগাযোগ করতে পারবে। এর ফলে দ্রুত সময়ে কৃষিপণ্য রাজধানী ও অন্যান্য শহরে আসতে পারবে। এর ফলে দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষের দারিদ্র্য বিমোচন হবে ও জাতীয় প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি পাবে। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্র বন্দর মংলা ও বেনাপোল স্থলবন্দর সাথে ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হবে।  সর্বোপরি এটি দেশের উন্নতিতে অবদান রাখবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ

Emoji
(y)
:)
:(
hihi
:-)
:D
=D
:-d
;(
;-(
@-)
:P
:o
:>)
(o)
:p
(p)
:-s
(m)
8-)
:-t
:-b
b-(
:-#
=p~
x-)
(k)