পর্তুগিজ:-
পর্তুগাল এর অধিবাসীদেরকে পর্তুগিজ বলে। পর্তুগীজদের মধ্যে প্রথম সমুদ্রপথে 1998 খ্রিস্টাব্দের ২৭ মে ভারতবর্ষের পশ্চিম উপকূলের কালিকট বন্দরে এসে উপস্থিত হন পর্তুগিজ নাবিক ভাস্কো দা গামা। তার আসার পরপরই পর্তুগিজরা এদেশে আসতে শুরু করে। বাণিজ্য করার জন্য তারা ভারতবর্ষে আসলেও ধীরে ধীরে তারা সাম্রাজ্য বিস্তার করার জন্য চেষ্টা করে। 1510 খ্রিস্টাব্দ আলবুকার্ক ভারতের গোয়ায় পর্তুগিজরা প্রতিনিধি হিসাবে আসেন। পর্তুগিজ বণিক আল্ভারেজ কাব্যাল আরব নাবিক এবং বণিকদের নৃশংসভাবে হত্যা করে কালিকট বন্দর থেকে বিতাড়িত করেন। ভারতবর্ষের পশ্চিম উপকূলের কালিকট, বোম্বাই, লাল সেটি, গোয়া, দমন, দিউ প্রভৃতি স্থানে তারা কূঠি স্থাপন করে।
হুগলি নামক স্থানে 1579 খ্রিস্টাব্দে তারা উপনিবেশ গড়ে তোলে। এরপর তারা উড়িষ্যায় এবং বাংলার কিছু অঞ্চলে বসতি সম্প্রসারণ করে। তারা সুযোগ পেলেই জুলুম-নির্যাতনের অত্যাচার এবং লুণ্ঠন করত। অনেক সময় তারা বিনা শুল্কে ব্যবসা বাণিজ্য করতো। এছাড়াও তারা জোর করে দেশের অসহায় বালক বালিকাদের খ্রিস্টান বানাতে। সম্রাট শাজাহানের নির্দেশে কাসিম খান পর্তুগিজের হুগলি কুঠি থেকে বিতাড়িত করেন এবং বাংলার সুবাদার শায়েস্তা খান তাদেরকে চট্টগ্রাম এবং সন্দীপ ঘাঁটি থেকে বিতাড়িত করে।
ডাচ বা ওলন্দাজ:
হল্যান্ডের অধিবাসীদেরকে ডাচ বা ওলন্দাজ বলে। 1595 খ্রিস্টাব্দে চারটি চারটি জাহাজ উত্তমাশা অন্তরীপ হয়ে ভারতবর্ষের উদ্দেশে যাত্রা করে। প্রাচী ও বাণিজ্যে আধিপত্য বিস্তারের উদ্দেশ্যে হল্যান্ডের একদল বণিক ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি গঠন করে 1602 খ্রিস্টাব্দে ভারতবর্ষে আসে। তারা ভারতবর্ষের কালিকট, নাগাপর্ন বাংলা চূচুড়া ও বাঁকুড়া সহ বালেশ্বর, কাশিমবাজার এবং বরণগড়ে বাণিজ্য কুঠি স্থাপন করেন। ওলন্দাজরা প্রথমে ইংরেজদের সাথে রেশমি সুতা, সুতি কাপড়, চাল, ডাল ও তামাক এদেশ থেকে রপ্তানি করত এবং অন্যান্য দেশ থেকে এদেশে মসলা আমদানি করতো।
ইংরেজদের সাথে তাদের বাণিজ্য চুক্তি ইংরেজদের সাথে তাদের বাণিজ্য চুক্তি হয়েছিল কিন্তু দুই বছরের ভেতর বিরোধের কারণে ভেঙে যায়।পাশাপাশি বাংলা শাসনকর্তাদের সাথেও তাদের প্রবল বিরোধপূর্ণ হয়। 1759 খ্রিস্টাব্দে সংঘটিত বিধাতার যুদ্ধে তারা ইংরেজদের কাছে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয় এর আগে ইংরেজরা তাদের কুঠিগুলো দখল করে নেয়। হলে ওলন্দাজদের বাণিজ্যিক সুবিধা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। এবং 1805 খ্রিস্টাব্দে তারা ভারত বর্ষ ত্যাগ করে মালেশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় চলে যায়। সেখানে তারা উপনিবেশ স্থাপন করে। এর ফলে ভারতবর্ষে ইংরেজরা তাদের আধিপত্য বিস্তারের পথ সুগম করে ফেলে।
আরো পড়ুন:- মোবাইল দিয়ে আয়
দিনেমার:-
ডেনমার্কের অধিবাসীদেরকে দিনেমার বলা হয়। 1620 খ্রিস্টাব্দে দিনেমাররা ভারতবর্ষে বাণিজ্য করার জন্য ডেনিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি গঠন করে এবং দক্ষিণ ভারতের তাঞ্জোর জেলায় ত্রিবাঙ্গুরে এবং 1676 খ্রিস্টাব্দে বাংলা শ্রীরামপুরে তারা বাণিজ্য কুঠি স্থাপন করে। কিন্তু এ দেশেও তারা বাণিজ্যিকভাবে সফল হতে পারেনি। তাই 1845 খ্রিস্টাব্দে ইংরেজদের কাছে বাণিজ্য কুঠি বিক্রি করে তারা ভারত বর্ষ থেকে চিরতরে বিদায় নেয়।
বর্গী:-
ছোটবেলায় আমরা আমাদের মা বা দাদির কন্ঠে শুনেছি খোকা ঘুমালো পাড়া জুড়ালো বর্গী এলো দেশে ধান ফুরালো পান ফুরালো খাজনা দিবো কিসে। আসুন আজকে জেনে নিই বর্গী কারা। ঘটনা শুরু হয় 1740 সালে যখন বাংলার নবাব শরফুদ্দিন খাঁকে যূদ্ধে পরাজিত করে বাংলার নবাবি পান নবাব আলীবর্দী খাঁ। তখন উড়িষ্যার রাজা ছিল শরিফ উদ্দিনের জামাতা দ্বিতীয় মুর্শিদকুলি খাঁ। তিনি নবাব আলীবর্দী খানের অধীনে রাজ্য শাসন করতে চাই ছিলেন না এবং বিদ্রোহ ঘোষণা করেন যার ফলে নবাব আলীবর্দী খান যুদ্ধ করে উড়িষ্যা দখল করে নেন। দ্বিতীয় মুর্শিদকুলি খাঁ নাগপুরের মারাঠা রাজা রঘুজি বোসলেকে বাংলা আক্রমণের জন্য আমন্ত্রণ জানান। রোগীর ছিল এক দুর্ধর্ষ সেনাবাহিনী যাদের হাতে থাকতো লম্বা এবং তীক্ষ ধরনের বর্সা এবং গায়ে ছিল মোটা কম্বলের আবরণ আচ্ছাদিত পোশাক।
তখন ওই ধরনের বর্সাকে বরচি বলা হত এবং এই কথা থেকেই বর্গী নামটি এসেছে। এই বর্গীরা বাংলার নানা স্থানে আক্রমণ চালাতে এবং লুটপাট করে সকল সম্পদ নিয়ে যেত। কয়েকবার এরা মুর্শিদাবাদে ও হামলা চালিয়ে সেখানকার সম্পদ লুট করে নিয়ে গেছিল। নবাব আলীবর্দী খান তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করলেও ঠিক তাদের পরিপূর্ণভাবে দমন করতে পারেননি। অবশেষে মারাঠা বর্গীদের সাথে আলীবর্দী খানের সন্ধির মাধ্যমে আক্রমণের অবসান হয় কিন্তু পরিপূর্ণ অবসান হয়নি।
ফিরিঙ্গি:-
ইউরোপীয়দের মধ্যে প্রথম পর্তুগীজ রাই বাংলায় বাণিজ্য করার জন্য এসেছিলাম মূলত তাদেরকেই ফিরিঙ্গি বলা হয়। ফিরিঙ্গি শব্দটি এসেছে ইংরেজি শব্দ ভরত্বরমহবৎ (বিদেশি) থেকে। 1600 সালে পর্তুগীজদের অনেকগুলো জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দর এসেছিল। পরবর্তী সময়ে তারা এ বাংলায় ও ভারতের বিভিন্ন স্থানে বাণিজ্য কুঠি স্থাপন করেছিল। চট্টগ্রামের এখনও একটি বাজারের নাম ফিরিঙ্গিবাজার। এই পর্তুগিজ দস্যুরা সাধারণ মানুষের উপর অত্যাচার নির্যাতন করতো এবং দস্যুতা করতো। পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে জোর করে খ্রিস্টান বানানোর চেষ্টা করতা। পরবর্তীতে ফরাসী ও ইংরেজ ভারত উপমহাদেশে আক্রমণের কারণে পর্তুগিজরা তাদের ব্যবসা করতে না পেরে ভারত উপমহাদেশ থেকে চলে যায়।
1 মন্তব্যসমূহ
Ex
উত্তরমুছুন