সংক্ষিপ্ত পরিচয়:
মাত্র 50 জন মাদ্রাসা ছাত্র নিয়া মোল্লা ওমর গঠন করেন তালেবান। ধীরে ধীরে সময়ের পরিক্রমায় এর আয়তন বাড়তে থাকে, আফগানিস্তানের হাজার হাজার মানুষ এই সংগঠনে যোগ দিতে থাকে। একপর্যায়ে তালেবান দেশটির বিভিন্ন প্রাদেশিক রাজধানী দখল করে অবশেষে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল জয়ের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসে 1996 সালে। আলকায়দাকে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে আমেরিকাও তার মিত্ররা চেয়েছিল আফগানিস্তানকে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে কিন্তু আল্লাহর অশেষ রহমতে বিশ বছরের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর তারা লেজ গুটিয়ে বাড়ি দিকে পালিয়ে যাচ্ছে।
তালেবান অর্থ কি
তালেবানের যুদ্ধ
তালেবানের সরকার গঠন
তালেবান নিউজ
তালেবানের খবর
তালেবান কারা
তালেবানের ইতিহাস
তালেবান যে বিজয়ী তার প্রমান 2020 সালের কাতারের রাজধানী দোহায় আফগান তালেবানদের সাথে আমেরিকার শান্তি চুক্তি। ও অবশেষে 2021 সালের 15ই আগস্ট সম্মিলিত তালেবান বাহিনীর কাছে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের পতনের মাধ্যমে। আজ আমরা জানবো তালেবান ও তাদের উত্থান সম্পর্কে:-
তালেবানের গঠন:-
1994 সালে মোল্লা মোহাম্মদ ওমর গঠন করেন তালেবান। মোল্লা মোহাম্মদ ওমর সোভিয়েতদের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষভাবে যুদ্ধ করেছেন, আফগান সোভিয়েত ইউনিয়ন যুদ্ধে তিনি তার একটি চোখ হারানো। পরবর্তীতে তিনি পাকিস্তানের করাচির বিনুরি মসজিদে ইমামতি দায়িত্ব পালন করেন। আর সেখানে আল কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনের সাথে তার দেখা হয়। ধীরে ধীরে ওসামা বিন লাদেনের সাথে মোল্লা ওমরের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
অনেকে আল-কায়েদা ও তালেবানকে একই সংগঠন মনে করে থাকেন কিন্তু বাস্তবে এটা দুটি আলাদা সংগঠন আল-কায়েদার নেতা হলো ওসামা বিন লাদেন অন্যদিকে তালেবানের প্রতিষ্ঠানতা হলো মোল্লা ওমর। তবে তালেবান ও আল কায়েদার মধ্যে সুসম্পর্ক অটুট রয়েছে।
তালেবানের ইতিহাস:
তালেবান গঠন করা হয় মূলত আফগানিস্তান থেকে সোভিয়েতদের সেনাদের কে হটানোর জন্য ও আফগানিস্তানকে একটি স্বাধীন ও ইসলামী শরিয়া ভিত্তিক দেশে পরিণত করার জন্য। প্রথমে তালেবানকে সোভিয়েত ইউনিয়নকে ঠেকানোর জন্য সাহায্য করে আমেরিকা ও পাকিস্তান। আমেরিকা তাদেরকে অস্ত্র ও আর্থিক ভাবে ও অন্যভাবে তালেবানকে সাহায্য করে ।
যার ফলশ্রুতিতে আফগান মুজাহিদদের কাছে হার স্বীকার করে 1989 সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন তাদের সৈন্যদেরকে আফগানিস্তান থেকে বের হয়ে যেতে বাধ্য হয়। দুর্বল নজিবুল্লাহ সরকারের পতন হয় 1992 সালে
এরপর শুরু হয় মূল সংঘর্ষ। আফগান মুজাহিদ বিভিন্ন দলে উপদলে বিভক্ত হয়ে পড়ে এবং একে অন্যের বিরুদ্ধে লড়াই করতে থাকে। ঠিক সেই সময় মোল্লা ওমর সিংগেরশরে ফিরে আসেন, প্রায় অর্ধশতাধিক মাদ্রাসাছাত্র নিয়ে একটি সশস্ত্র সংগঠন গড়ে তোলেন যার নাম দেওয়া হয় তালেবান। সংগঠনের সদস্য সংগ্রহ করা হতো আফগানিস্তানের বিভিন্ন স্থানের বিভিন্ন মাদ্রাসা থেকে এবং শরণার্থী শিবিরগুলো থেকে। ধীরে ধীরে সংগঠনটির আকার অনেক বৃদ্ধি পেতে থাকে।
গৃহযুদ্ধের সময় সরকারের ব্যাপক দুর্নীতির বিরুদ্ধে তালেবানেরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন ও আফগানের সকল মানুষকেই একত্র করে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের প্রচেষ্টা করে তারা ব্যর্থ হয়। 1994 সালে তালেবানেরা আফগানিস্তানের কান্দাহার দখল করে নেয় পরের বছর সেপ্টেম্বরে আফগানিস্তানের হিরাত দখল করে নেয়। অবশেষে 1996 সালে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের পতন ঘটে। 1997 সালে তালেবান একটি ইসলামী রাষ্ট্রের ঘোষণা দেয় ও রাষ্ট্র গঠন করে। সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও পাকিস্তান দেশটি কে স্বীকৃতি দেয়।
আফগানিস্তানের তালেবানরা কঠোরভাবে শরিয়াহ আইন প্রয়োগ করে। তারা নারীদের সম্পূর্ণ স্বাধীনতায় বিশ্বাস করত না। অনুনাসিক আর থেকে ইসলামী শিক্ষাকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হতো। নারীদেরকে বোরকা পরে বাইরে বের হতে হতো ও দূরে গমনের জন্য সাথে একজন মাহরাম পুরুষকে থাকতে হতো।
এমন বিষয়গুলো ভালোভাবে দেখেনি পশ্চিমারা তারা তালেবানদের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার লিপ্ত হয় যেমন তারা জনগণের মৌলিক অধিকার হরণ করছে, নিজস্ব মতবাদ আফগানিস্তানের মানুষের উপর চাপিয়ে দিচ্ছে, আফগান তালেবান জঙ্গী বলে পৃথিবীর কাছে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়।
মূল ঘটনা:
কিন্তু মূল সমস্যা দেখা দেয় 2001 সালের 11 সেপ্টেম্বর টুইন টাওয়ারে হামলায় দায় আল-কায়েদার উপরে পড়ে আফগানিস্থান ছিল আল-কায়েদার একটি শক্ত ঘাঁটি ছিল। তৎকালীন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ তালেবান নেতা মোল্লা ওমরের কাছে আল-কায়েদার প্রধান ওসামা বিন লাদেন ও তাদের সদস্যদেরকে তুলে দিতে বলে কিন্তু তালেবান নেতা মোল্লা ওমর তাদেরকে ফিরিয়ে দিতে অস্বীকৃতি জানায়। শুরু হয়ে যায় আমেরিকা ও তার মিত্রদের আফগানিস্তানের উপর হামলা আফগান ও তার মিত্রদের হামলায় আফগানিস্তানে ক্ষমতা হারায়।
তারা ক্ষমতায় থেকে দূরে চলে যায়। এসময়ের ভেতর আমেরিকা ও তার মিত্ররা তাদের নিজের পছন্দমত সরকারকে ক্ষমতায় বসায় কিন্তু তখনও আফগান তালেবানরা পরিপূর্ণভাবে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়নি। তারা আফগানিস্তানের রাজধানী খেলে যায় ও দেশের বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলে আশ্রয় গ্রহণ করে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আফগানদের তালেবানের মধ্যে এ যুদ্ধে আফগান তালেবানরা ব্যাপক সংখ্যক যোদ্ধা হারাই কিন্তু পরবর্তী সময়ে তাদের সরব উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। দেশের প্রায় সকল স্থানে তালেবানের উপস্থিতিতে আছে। আফগানিস্তানের প্রায় সকল অঞ্চলে তাদের সরব উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। তাদের স্বর্ণ সংখ্যা প্রায় 60 হাজারের অধিক। পাশাপাশি আফগানিস্তানের অনেক অঞ্চল তাদের দখলে আছে। তারা দেশের এর বিভিন্ন খনির উপর তাদের আধিপত্য ধরে রেখেছিল ওইসব খনি থেকে তাড়াতাড়ি আয়ের একটা অংশ পেত।
পাশাপাশি তাদের দখলকৃত এলাকায় তারা একটি কর ব্যবস্থার প্রবর্তন করে তা বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান থেকে কর আদায়ের মাধ্যমে তাদের বহন করত। এভাবে ধীরে ধীরে তালেবানেরা তাদের শক্তিকে আফগানিস্তানের জানান দিতে শুরু করেন ও একে একে আফগানিস্তানের বিভিন্ন প্রদেশে দখল নিতে থাকে।
তালেবানের বিজয়:
প্রায় দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে আমেরিকা ও তার মিত্ররা আফগানিস্তানের উপর তাদের হামলা চালায়। কিন্তু তারা তাদের মূল উদ্দেশ্য তখনও সাধন করতে পারেনি তারা চেয়েছিল আফগানিস্তানকে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বানাতে ও আমেরিকার করবে এমন একটা সরকার বসাতে আর আমেরিকা যেখানে যায় সেখানে থেকেই তাদের মূল্যবান সম্পদ চুরি করে এটা তো সবাই জানে কিন্তু আফগান যুদ্ধে তারা আফগানিস্তান থেকে কোন ধরনের আফগান সম্পদ চুরি করতে পারেনি বলে আশা করা যায়। এই যুদ্ধে আফগান তালেবান ওআমেরিকা ও তার মিত্রদের আর্থিক ও সামরিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল সম্পর্কে কিছু জেনে আসি:-
এ যুদ্ধে আমেরিকা প্রায় 2300 আমেরিকান সন্য হারায়। আফগানিস্তানের তালেবানরা তাদের অনেক সন্য হারায়। আমেরিকান আফগানিস্তানের আফগান সরকার ও সরকারি বাহিনীর পিছনের ও তাদের বিভিন্ন হামলা পরিচালনার কাজে হাজার হাজার মার্কিন ডলার ব্যয় করে। আফগানিস্থানে আমেরিকানদের যে ক্ষতি হয়েছে তার চেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে আফগানিস্তানের সাধারণ মানুষের ও আফগান সরকারি বাহিনীর। প্রায় 60 হাজার আফগান সরকারি সন্য এই যুদ্ধে নিহত হয়। দেশের অর্থনীতিতে পরিপূর্ণভাবে ভঙ্গর অবস্থা বিরাজ করছে। সকল প্রকার অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে। প্রায় দুই দশক ধরে তেমন কোনো উন্নতি হয়নি কিন্তু ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক। আফগানিস্তানের মানুষের জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
অবশেষে আমেরিকার আফগান তালেবানদের সাথে যুদ্ধে জিততে না পেরে 2020 সালের 29 ফেব্রুয়ারি কাতারের রাজধানী দোহায় তাদের সাথে শান্তি চুক্তি করে। যার শর্ত অনুযায়ী 2021 সালের 11 সেপ্টেম্বরের ভেতর আফগানিস্তান থেকে আমেরিকা ও তার মিত্রদের সকল সন্য প্রত্যাহার করা হবে। আমেরিকা ও তার মিত্র দেশের সেনারা আফগান মাটি ছেড়ে যেতে না যেতেই আফগান তালেবানরা দেশের বিভিন্ন প্রাদেশিক রাজধানী দখল করে নেয়। একে একে কাবুলের চতুর্পাশে সকল প্রাদেশিক রাজধানী দখল করে নিয়ে কাবুলের দিকে অগ্রসর হয় অবশেষে 2021 সালের ১৫ ই আগস্ট তারা কাবুলের পতন ঘটিয়ে কাবুলের প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে আফগান নেতারা প্রবেশ করে।
এর আগে আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গানি প্রেসিডেন্ট পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যায়। ঘোষণা আফগানিস্তানে এক ইসলামী শরিয়া ভিত্তিক রাষ্ট্র গঠন করার কথা। তালেবান মুসলিমদের বিজয় গাঁথা সারা বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর জন্য গৌরব ও আনন্দের বিষয়। হাজারো বাধা অতিক্রম করে এত বড় একটা শক্তিধর দেশ কে হারিয়ে নিজের মাতৃভূমিকে দখল করা নিশ্চয়ই বীর মুজাহিদদের ই পক্ষে সম্ভব।
0 মন্তব্যসমূহ