প্রকৃতি:
চিন্তা করছেন বাইরে কোথায় ঘুরতে যাবেন। কিন্তু করোনা মহামারীর কারণে যেতে পারছেন না বা বা কোথায় ঘুরতে যাবেন খুঁজে পাচ্ছেন না। এখন বিদেশ ভ্রমণের চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলুন। কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার কবিতায় বলেছেন, "দেখা হয়নি চক্ষু মেলিয়া ঘর হইতে দুই পা ফেলিয়া একটি ধানের পাতার উপর একটি শিশির বিন্দু"। একটি ধানের পাতার উপর শীতকালের একটি শিশির বিন্দু জমে যে অপরূপ সৌন্দর্যের সৃষ্টি হয় তা আমরা দেখি না অথচ আমরা বিদেশ ভ্রমণে যাই দর্শনীয় স্থান দেখার জন্য। অথচ এই সৌন্দর্য বিদেশ ভ্রমণের দর্শনীয় স্থানগুলোর সৌন্দর্যের চেয়ে অনেক সুন্দর।
বাংলাদেশের সেরা দর্শনীয় স্থান
বাংলাদেশের সেরা ১০টি দর্শনীয় স্থান
বাংলাদেশের ৬৪ জেলার দর্শনীয় স্থান
ঢাকার বিভাগের দর্শনীয় স্থান
খুলনার দর্শনীয় স্থান
সিলেটের দর্শনীয় স্থান
চট্টগ্রামের দর্শনীয় স্থান
চোখ দিয়ে নিজের জন্মভূমি বাংলাদেশেকে দেখার চেষ্টা করুন। অপরূপ রূপ বৈচিত্র সুরজিত আমাদের মাতৃভূমি। দেশের প্রত্যেকটা কোনায় কোনায় রয়েছে এর রূপের ছটা। আল্লাহ তায়ালা বাংলাদেশকে তার নিজ হাতে যেন সুন্দর করে সাজিয়ে রেখেছেন। আপনি যদি চেষ্টা করেন বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থানগুলো ওকে একবার ঘুরে আসতে আমি বলতে পারি আপনার এই ভ্রমণে বছরের পর বছর কেটে যেতে পারে। বিদেশের দর্শনীয় স্থান গুলোর চাইতেও বাংলাদেশে এমন অনেক দর্শনীয় স্থান আছে যা অধিক মূল্যবান। বিদেশে ভ্রমণ এর চাইতেও এসব স্থানে ভ্রমণ খরচ অনেক কম ও সুবিধা অনেক বেশি।
আপনি চাইলে আপনার অবসরের সময়টুকু বাকি এ দেশের এই দর্শনীয় স্থানগুলো কে একবার ঘুরে আসতে পারেন। যা আপনার মনকে প্রশান্ত করবে দিবে অনাবিল আনন্দ। প্রত্যেক বছর বিদেশ থেকে লাখ লাখ পর্যটক আসে বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থান গুলো কে দেখার জন্য। আসুন জেনে নেই বাংলাদেশের কিছু দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে যা সকলের কাছে খুবই জনপ্রিয়:-
১) সেন্টমার্টিন
বিষের ভ্রমণ পিপাসু মানুষদের কাছে এক আরাধ্য স্থানের নাম সেন্টমার্টিন বাংলাদেশের বঙ্গোপসাগরের ভিতরে অবস্থিত। সেন্টমার্টিন দ্বীপ কি নারিকেল জিঞ্জিরা বা দারুচিনি দ্বীপ বলা হয়ে থাকে। দ্বীপের দুইপাশের সমুদ্রের জলরাশি আর উপরের নীল আকাশ মিলে এক অকল্পনীয় সৌন্দর্যের সৃষ্টি হয়। সারি সারি নারিকেলের গাছ আর কেয়া বন মানুষের মনকে মুগ্ধ করে দেয়। ভাটার সময় দ্বুীপটির প্রবাল প্রাচীর গুলো মানুষের কাছে এক অতিরিক্ত আনন্দেরই অংশ হিসেবে ধরা দেয়। এখানে গেলে আপনি দেখতে পাবেন ঝাকে ঝাকে উড়ে চলা পাখি আর সমুদ্রের নীল জলরাশির পাড়ে আছড়ে পড়ার শব্দ, সাথে সাথে সূর্যের উদয় এবং অস্ত দৃশ্য খুব ভালোভাবেই দেখতে পাবেন। প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষ এ দ্বীপে ভ্রমণে আসে।
২)কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত:-
বাংলাদেশের দক্ষিণ অঞ্চলের কক্সবাজারে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত অবস্থিত। যা দেখার জন্য প্রত্যেক বছর অনেক পর্যটক বাংলাদেশে আসেন। শীতকালে ভ্রমণের জন্য এই সমুদ্র সৈকত আপনার জন্য কারণ শীতকালে আবহাওয়া ঠিক থাকে। এই সৈকতে আপনি আপনার শরীর দিয়ে নির্মল বাতাস এর সাথে আলিঙ্গন করতে পারেন। 120 কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্র সৈকতের বালুকা বেলায় খালি পায়ে হাঁটতে পারেন ও দেখতে পারেন লাল কাকড়ার অপরূপ দৃশ্য যা আপনার মনকে আনন্দে ভরে দেবে। পাশাপাশি দেখতে পারেন সমুদ্রের নীল জলরাশির সৈকতপ্রান্তে আছড়ে পড়ার দৃশ্য।
তাছাড়াও সমুদ্র সৈকতে সূর্য উদয় ও সূর্য অস্ত আমাদের মনকে প্রকৃতির প্রতি উৎফুল্ল করে দেয়। এছাড়াও আপনি কক্সবাজারে গেলে দেখতে পাবেন বিশাল মেরিন ড্রাইভ। যেখানে আপনি সাগরের খোলা বাতাসে সড়কে গাড়ি চালাতে পারেন। একপাশে পাহাড় আর অন্যপাশে সমুদ্র এ যেন প্রকৃতির অপরূপ দৃশ্য। এছাড়াও পূর্ণিমা রাতে সমুদ্র সৈকতের দৃশ্য গুলো দর্শনার্থীদের কাছে বিশেষভাবে আকর্ষণীয়।
৩) সুন্দরবন
একঘেয়েমি কর্মজীবন থেকে ছুটি নিয়ে আপনি বেরিয়ে আসতে পারেন সৌন্দর্যের লীলাভূমি সুন্দরবন থেকে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন এটি। ৬.১৭ বর্গ কিলোমিটারের এই বনটি লবণাক্ত বন হিসেবে পরিচিত। বিশাল জলাভূমি আর নানা জীববৈচিত্র্যে সজ্জিত সুন্দরবন। চারপাশে সবুজ আর সবুজের সমারোহ। এখানে গেলে আপনি দেখতে পাবেন নানা ধরনের উদ্ভিদ ও প্রাণী যারা জলে বাস স্থলে বাস করে। তাছাড়াও আছে পাখপাখালির কলরবময় ধ্বনি যা আপনার মনকে আনন্দে ভরে দেবে।
বঙ্গোপসাগর থেকে ছুটে আসা লবণাক্ত বাতাস আর প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যে রোমাঞ্চকর আর অ্যাডভেঞ্চার এর অভিজ্ঞতা পাবেন আপনি এখানে জলে কুমির ডাঙায় বাঘ এই ভয়নি আপনাকে বেড়াতে হবে সারা বন জুড়ে। রয়েল বেঙ্গল টাইগার, হরিণ, সাপ, বানর, মাছ, কুমির আরও না না প্রাণী সকলের কাছে বিখ্যাত প্রাণী। পরিবারের সদস্য নিয়ে নিয়ে আপনি বনে ঘুরতে যেতে পারেন। নদীর বালুকাবেলায় হেঁটে বেড়াতে পারেন, ছবি তুলতে পারেন নানা প্রাণীর, দেখতে পারেন বাদরের বাদরামি।
আরো জানুন:-
৪) টাঙ্গুয়ার হাওর
বাংলাদেশে সুবিশাল গামলা আকৃতির অগভীর জলাভূমি কে হাওর বলা হয়। বর্ষাকালে হাওরগুলো পানিতে ভরা থাকে। বাকি সাত মাসে এ অবস্থায় থাকে। বর্ষাকালে হাওরগুলো ঢেউয়ের সাগর এর রূপ লাভ করে। আবার শীত কিংবা গ্রীষ্মকালে হাওরগুলো বিস্তীর্ণ প্রান্তর এ পরিণত হয়। বাংলাদেশের সুনামগঞ্জ জেলায় এহাওর অবস্থিত। এর একপাশে থেকে দেখা যায় ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সুউচ্চ পাহাড় গুলো। মেঘালয় থেকে প্রায় 30টির মতো ঝরনা এ হাওরে এসে মিশেছে। বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহৎ মিষ্টি পানির আধার হলো টাঙ্গুয়ার হাওর। হাওরের মাঝখানের গ্রামগুলোকে দেখলে মনে হয় এগুলো সাগরের মাঝে অবস্থিত বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। সানি বেড়াতে যাওয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ সময় হল বর্ষাকাল। একটা নৌকা ভাড়া করে আপনি ও আপনার পরিবার ঘুরে দেখতে পারেন পুরো হাওর।
৫)রাতারগুল জলাবন:-
রাতারগুল জলাবন হলো মিঠাপানির বন ও বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য। এটি বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের গোয়াইনঘাটে অবস্থিত। পৃথিবীর বেশ কয়েকটি মিঠা পানির জলাভূমির বন আছে তার মধ্যে রাতারগুল জলাবন অন্যতম । এটি বাংলাদেশের বন বিভাগের অধীনে সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে বিবেচিত। চিরসবুজ এই বনটি গোয়াইন নদীর তীরে অবস্থিত। যা চেঙ্গি খালের সাথে মিলিত হয়েছে। এ বনে সবচেয়ে বেশি জন্মায় করজ। বর্ষাকালে এমন 2030 ফুট পানির নিচে তলিয়ে থাকে বাকি অন্য সময় পানির উচ্চতা 10 ফুটের বেশি হয় না। এবনে জলমগ্ন গাছ গুলো দেখতে অনেক সুন্দর দেখায়। এবন নানা প্রাণী ও পাখিদের জন্য অভয় অরণ্য। এই বনে ভ্রমণ করার জন্য প্রয়োজন হয় ডিঙ্গি নৌকার। নৌকা ভ্রমণ করতে করতে দেখা যায় প্রকৃতির অপার রূপের সুধা। এবন ভ্রমণের জন্য বোর্ড অফিস থেকে ছাড়পত্র নিতে হয়।
অন্যান্য:-
এ স্থানগুলো ছাড়াও বাংলাদেশে আরও অনেক জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান রয়েছে। যেমন পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত এটিও দর্শনার্থীদের কাছে বেশ ভালোই প্রিয়। প্রতিবছর হাজার হাজার দর্শনার্থী এখানে আসেন কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত কে দেখার জন্য। এটিই বাংলাদেশের একমাত্র স্থান যেখানে থেকে সূর্যোদয় এবং অস্ত একসাথে দেখা যায়। এখানে শ্রমিকরা নদী থেকে পাথর তুলে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে।
পাশাপাশি রয়েছে সিলেটের জাফলং। এটি বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় পর্যটন স্পট। এখানে থেকে দেখা যায় অনেক গুলো ঝরনা এবং ঝর্ণা ও নদীর মিলন মেলা। যা মানুষের অন্তর প্রকৃতির কাছে নিয়ে আসে। এছাড়াও রাঙ্গামাটিতে অনেকগুলো পর্যটন স্পট আছে। রাঙ্গামাটি ঝুলন্ত সেতু আমাদের কাছে অনেক জনপ্রিয়। এছাড়াও আরো আছে নীলাচল, সাজিদসহ অন্যান্য পর্যটন স্থান যেগুলো বাংলাদেশের মানুষের কাছে অনেক জনপ্রিয়।
ভ্রমণ মানুষের জীবনের একঘেয়েমি দূর করে। মানুষের মনকে সতেজ করে। যা মানুষকে পূর্ণোদ্যমে কর্মে ব্যস্ত রাখতে প্রেরণা যোগায়। ভ্রমণের মাধ্যমে আমরা আমাদের প্রকৃতি ও চারপাশ সম্পর্কে জানতে ও বুঝতে পারি। ভ্রমণ মানুষকে প্রকৃতির প্রতি আরো বেশি আকর্ষিত করে তোলে।
1 মন্তব্যসমূহ
Xenophobic
উত্তরমুছুন