(Pigeon) কবুতর:-
পৃথিবীতে প্রায় 600 প্রজাতির কবুতর আছে। কবুতরের জাত কে প্রধানত দুই ভাগে ভাগে উল্লেখ করা যায়। কবুতর শান্তির প্রতীক এবং সহজেই পোষ মানে। স্বল্প সময়ে এবং অল্প ব্যয়ে কবুতর পালন করে লাভবান হওয়া যায়। পরিবারের আমিষের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি সৌখিন মানুষ চিত্তবিনোদনের জন্য কবুতর পালন করেন। বর্তমান পৃথিবীতে প্রায় ২০০-৩০০ প্রজাতির কবুতর রয়েছে।ক) মাংস উৎপাদনের জন্য:-
হোয়াইট কিং, সিলভার কিং, ডাউকা, হোমার, কারনাউ, গোলা ইত্যাদি।
খ) চিত্তবিনোদনের জন্য:-
গিরিবাজ, লোটন, ময়ূরপঙ্খী, সিরাজী, ফ্যানটেইল, ইত্যাদি অত্যন্ত জনপ্রিয়। গিরিবাজ কবুতর উড়ন্ত অবস্থায় শূন্যে ডিগবাজি খেয়ে মানুষের চিত্তাকর্ষণ করে।
কবুতরের জাত বা প্রকারভেদ:-
পৃথিবীতে বহুবিচিত্র জাতের কবুতর রয়েছে। আমাদের দিকে ২০ টির অধিক জাতের কবুতর আছে বলে জানা যায়। নিন্মে প্রধান কয়েকটি জাত সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
গোলা:-
এ জাতের কবুতরের উৎপত্তি স্থল ভারত উপমহাদেশে। আমাদের দেশে এ জাতের কবুতর প্রচুর দেখা যায়। মাংসের জন্য যথেষ্ট জনপ্রিয়তা রয়েছে। ঘরের আশেপাশে খোপ নির্মাণ করলে এরা এসে বসবাস করে। এর বর্ণ বিভিন্ন শেডযুক্ত ধূসর নীল। এদের চোখ ও পা লাল রঙের।
গোলী:-
গোলা জাতের কবুতর ও গলি জাতের কবুতর ভিন্ন প্রকৃতির। পাকিস্তানের লাহোর ও ভারতের কলকাতায় বেশ জনপ্রিয়। এদের ঠোঁট ছোট এবং পায়ের লোম থাকে না। এদের বর্ণ সাদার মধ্যে বিভিন্ন ছোপযুক্ত।
গিরিবাজ:-
এসব জাতের কবুতর আকাশে ডিগবাজী খায় বলে এদের টাম্বলার বলে। আমাদের দেশে এ জাতটি গিরিবাজ নামে পরিচিত। এদের উৎপত্তি পাক-ভারত উপমহাদেশে। মনোরঞ্জনের জন্য আমাদের দেশে এদের যথেষ্ট কদর ও জনপ্রিয়তা রয়েছে।
লোটন :-
লোটন কবুতরের রোলিং কবুতর বলা হয়। গিরিবাজ যেমন শূন্যে ডিগবাজি খেতে পারে তেমনি লোটন কবুতর মাটিতে ডিগবাজি খেতে পারে। সাদা বর্ণের কবুতরের ঘুরানো ঝুটি রয়েছে। এদের চোখ গাঢ় পিঙ্গল বর্ণের এবং পা লোমযুক্ত।
সিরাজী বা লাহোরী:-
আমাদের দেশে এই কবুতরটি শিরাজী কবুতর হিসেবে পরিচিত। এদের উৎপত্তিস্থল লাহোরে। চোখের চারদিক থেকে শুরু করে গলার সম্মুখভাগ বুক, পেট, পা, লেজের পালক সম্পূর্ণ সাদা হয় এবং মাথা থেকে শুরু করে গলার পিছন দিক এবং পাখা রঙিন হয়। সাধারণত কালো, লাল, হলুদ, নীল ও রূপালী বর্ণের কবুতর দেখা যায়।
কিং:-
কিং জাতের কবুতরের মধ্যেও হোয়াইট কিং এবং সিলভার কিং আমেরিকাসহ ইউরোপের অন্য দেশগুলোতে বিশেষ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। এছাড়াও রয়েছে ব্লু, রেড এবং ইয়োলো কিং। কিং জাতের কবুতর প্রদর্শনীর জন্য পালন করা হয়। এ জাতের কবুতর বেশ বড় আকৃতির হয়ে থাকে।
ফ্যানটেল:-
এটি অতি প্রাচীন জাতের কবুতর। ফ্যানটেল জাতের কবুতরের উৎপত্তি ভারতে। এ জাতের কবুতর লেজের পালক পাখার মত মেলে দিতে পারে বলে এদেরকে ফ্যানটেল বলা হয়। এদের রং মূলত সাদা তবে কালো, নীল ফ্যানটেল সৃষ্টি সম্ভব হয়েছে। এদের লেজের পালক বড় হয় উপরের দিকে থাকে পা লোম দ্বারা আবৃত থাকে। এ জাতের কবুতর প্রদর্শনী তে ব্যবহৃত হয় এজন্য জনপ্রিয়।
জ্যাকোবিন:-
এই কবুতরের মাথার পালক ঘাড় অবধি পড়ানো থাকে যা বিশেষ ধরনের মস্তকাবরণের মত দেখায়। ধারণা করা হয় এদের জন্মস্থান ভারতে। এই কবুতর সাদা, লাল, হলুদ, নীল ও রূপালী বর্ণের হয়। এদের দেহ বেশ লম্বাটে ও চোগ মুক্তার মত সাদা হয়।
মুকি:-
এ জাতের কবুতরের গলা পিছন দিকে বাঁকানো এবং কম্পমান অবস্থায় থাকে। এদের উৎপত্তি ভারতে। এদের উভয় বাধা উড়বার উপযোগী তিনটি পালক সাদা হয়। মাথা সাদা, বুক বেশ কিছুটা সামনের দিকে বাড়ানো থাকে। সাদা, কালো এবং নীল বর্ণের এই কবুতরের পায়ে লোম থাকে না।
কবুতর পালনের সুবিধা সমূহ:-
১)এক জোড়া কবুতর হতে বছরে 10-12 জোড়া বাচ্চা পাওয়া যায।
২) চার সপ্তাহের মধ্যেই কবুতরের বাচ্চা খাওয়ার উপযোগী হয়।
৩) কবুতর পালন ও জায়গা কম লাগে।
৪) কম খরচে দেয়ালে বা ছাদে কম খরচে বাসা তৈরি করা করে পালন করা যায়।
৫) কবুতর পাঁচ ছয়মাস বয়সে ডিম দেয়।
৬) কবুতরের ডিম থেকে মাত্র 18 দিনে বাচ্চা ফোটে।
৭) কবুতরের খাদ্য খরচ কম।
৮) কবুতরের মাংস সুস্বাদু ও আমিষসমৃদ্ধ।
৯) কবুতরের বাচ্চার মাংসে প্রচুর খনিজ ও ভিটামিন থাকায় অসুস্থ বাচ্চাদের জন্য একটি পুষ্টিকর খাদ্য।
১০) কবুতরের বিষ্ঠা সবজি বাগানের জন্য উৎকৃষ্ট জৈব সার।
১১) কবুতরের পালক কারখানায় কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
১২) কবুতর পোকা মাকড় ধ্বংস করে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সহায়তা করে। কবুতরে্য রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি। অল্প সময়ে বিনিয়োগকৃত অর্থ ফেরত পাওয়া যায় বলে দরিদ্র বিমোচন সাহায্য করে।
কবুতরের জীবনচক্র:-
কবুতর জোড়ায় জোড়ায় বাস করে। পুরুষ ও স্ত্রী কবুতর জোড়া বেঁধে একসাথে ঘরে করে। এরা ১২-15 বছর বাঁচে। 5/9 মাস বয়সী কবুতরের ডিমে তা দেয়। কোন কারনে কবুতরের নতুন জোড়া তৈরি করতে হলে স্ত্রী ও পুরুষ উভয়েই কবুতরকে এক ঘরে 7 থেকে 14 দিন আবদ্ধ করে রাখতে হবে। কবুতরের ডিম ফুটে বাচ্চা বের হতে সময় লাগে18 দিন। প্রথম 4-5 চোখের পাতা বন্ধ থাকে। সাত দিন পর গায়ের চামড়া কিছুটা রঙিন হতে আরম্ভ করে। ১৯ দিন বয়সে প্রায় সমস্ত শরীর ঢেকে যায় পরিপক্কতা লাভ করে এবং ঠোঁট স্বাভাবিক অবস্থায় আসে। বাচ্চা পূর্ণতাপ্রাপ্ত হয়ে খাওয়ার উপযোগী হয়।

0 মন্তব্যসমূহ