ইন্টারনেট কম্পিউটারবাহিত এমনই এক সংযোগ ব্যবস্থা যার মাধ্যমে আক্ষরিক অর্থে সারা বিশ্বই চলে এসেছে মানুষের হাতের মুঠোয়। এর সাহায্যে মানুষ উন্নতি করছে এমন এক স্তরে যেখানে সারা বিশ্বের সকল ইন্টারনেট ব্যবহারকারী একটি সমাজে পরিণত হয়েছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে এক নতুন দ্বার উন্মোচন হয়েছে এর মাধ্যমে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে মানুষ সময় ও দূরত্বকে কমিয়ে এনেছে।
(Internet) ইন্টারনেট বলতে কী বোঝায় / ইন্টারনেট কি:-
ইন্টারন্যাশনাল কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সার্ভিস ইন্টারনেট নামে পরিচিত। এটি কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সমূহের বিশ্বব্যবস্থা। কোন নেটওয়ার্কভুক্ত কম্পিউটারের মধ্যে অন্য নেটওয়ার্কভুক্ত কম্পিউটারের সঙ্গে নেটওয়ার্ক গড়ে তোলাই ইন্টারনেটের কাজ। বিভিন্ন নেটওয়ার্ক একত্র হয়ে পৃথিবীব্যাপী যে নেটওয়ার্ক সিস্টেম তৈরি হয় তাকে ইন্টারনেট বলেন।
ইন্টারনেটের মাধ্যমে পৃথিবীর এক প্রান্তের কম্পিউটার থেকে অন্য প্রান্তের আরেকটি কম্পিউটারে ছবি সহ যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ ও প্রেরণ করা যায়। ইন্টারনেট একটি বিশাল নেটওয়ার্কিং সিস্টেম এর বিস্তৃতি পৃথিবীময়। বিশ্বের লাখ লাখ বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণা ও ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠানসহ কোটি কোটি লোকের ব্যক্তিগত কম্পিউটারের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলছে ইন্টারনেট।
ইন্টারনেট বা আবিষ্কারের তৈরির ইতিহাস:-
ইন্টারনেট উদ্ভাবনের প্রাথমিক কারণ ছিল সামরিক বিশ্বের দুই পরাশক্তি সোভিয়েত ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চরম স্নায়ুযুদ্ধের কারণে দুই পরাশক্তি সমরবিশারদরাই পারমাণবিক বোমার ভয়ে অস্থির হয়ে উঠেছিলেন। তাদের সন্দেহ ছিল ধ্বংসাত্মক পারমানবিক বোমা বিস্ফোরিত হলে পুরো বিশ্বের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে। এজন্য যোগাযোগ মাধ্যমকে ধ্বংসের কবল থেকে রক্ষা করার চিন্তায় টেলিফোনের বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে ইন্টারনেট গড়ে তোলা হয়।
মার্কিন সামরিক সংস্থা নিজেদের অবস্থান গুলোর সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করার জন্য 1969 সালে প্রথম ইন্টারনেটের ব্যবহার শুরু করে। তখন এটি পরিচিত ছিল MILNET নামে। এ প্রযুক্তিকে জনকল্যাণমুখী করে তোলার জন্য পরীক্ষামুলকভাবে মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে দেয়া হলে তারা শিক্ষা গবেষণা এবং তথ্য আদান প্রদানের ক্ষেত্রে অপূর্ব সাফল্য অর্জন করে। 1984 সালে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সাইন্স ফাউন্ডেশন নেস্ফেনেট সর্বসাধারণের জন্য অন্যরকম একটি যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু করে। তখন তা ছিল কেবল গবেষণার কাজে তথ্য বিনিময়ের মাধ্যম
তিন বছরের মধ্যে নেস্ফেনেট সমগ্র বিশ্বে জড়িয়ে পড়ে। ক্রমে গড়ে ওঠে আরও ছোট-বড় আরো কিছু নেটওয়ার্ক। এর ফলে ব্যবস্থায় কিছুটা অরাজকতা দেখা যায়। এ অরাজকতা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সমগ্র ব্যবস্থার মধ্যে নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন দেখা দেয়। আর এজন্যই নব্বইয়ের দশকের শুরুতে একটি কেন্দ্রীয় নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হয়। বিশ্বের মানুষ পরিচিত ইন্টারনেটের সঙ্গে। 1993 সালে ইন্টারনেট ব্যবহার করার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
এর কয়েক মাসের মধ্যেই লাখ লাখ নতুন সদস্য ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত হয়। বর্তমানে সারাবিশ্বে কেন্দ্রীয় নেটওয়ার্কের সঙ্গে বিশ্বের সহস্রাধিক নেটওয়ার্ক যুক্ত হয়েছে। বর্তমানে এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা কেটি কোটি।
ইন্টারনেট কত প্রকার ও কি কি:-
ইন্টারনেট এর প্রকারভেদ:
ব্যবহারকারীরা দুভাবেই ইন্টারনেটের গ্রাহক হতে পারেন। প্রথমটি হল অনলাইন ইন্টারনেট। টেলিফোন লাইনের মাধ্যমে সরাসরি কম্পিউটারের ইন্টারনেট এর অন্য যেকোন সার্ভিস প্রোভাইডারের সঙ্গে যুক্ত করার পদ্ধতিকে অনলাইন ইন্টারনেট বলা হয়। তাতে ব্যবহারকারীগণ যেকোনো সময় অন্য যেকোনো প্রোভাইডারের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারে। এছাড়া IPACCES পদ্ধতিতে সরাসরি অনলাইন ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত হওয়া যায়। কিন্তু এই পদ্ধতি অতী ব্যয়বহুল হওয়ায় সাধারণ গ্রাহক তাতে আগ্রহ বোধ করে না।
দ্বিতীয়টি হলো অফলাইন ইন্টারনেট বা ইমেইল নামে পরিচিত। এই প্রক্রিয়ায় গ্রাহকগণ নিকটবর্তী কোন সার্ভারকে মাধ্যম হিসাবে গ্রহণ করে বলেই এটাকে অফলাইন ইন্টারনেট বা ইমেইল বলা হয়ে থাকে। এই পদ্ধতিতে গ্রাহকরা কম খরচে ইন্টারনেট এর মাধ্যমে যোগাযোগ তথ্য আদান-প্রদান করতে পারে।
ইন্টারনেটের সুযোগ সুবিধা:-
ইন্টারনেটের মাধ্যমে নানা রকম সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায়। যেমন নিউজগ্রুপ একটি তথ্য বা সংবাদ প্রদানকারী সংস্থা। ইন্টারনেটে নিউজগ্রুপ ব্যবহার করে বিশ্বের সকল খবরা-খবর জানা যায়। লেখা ও গবেষণার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হল যথার্থ বই। বিশেষ করে গবেষণাধর্মী বইয়ের জন্য অনেককে বিদেশেও যেতে হয়।
কিন্তু ইন্টারনেটের মাধ্যমে বাংলাদেশে বসে আমেরিকার ইউনাইটেড স্টেট অফ কংগ্রেস বা হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিসহ বিশ্বের যে কোন লাইব্রেরীর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা যায় এবং দুষ্প্রাপ্য তথ্যাদি জানা যায়। এর সাহায্যে এক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আরেক প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা বাণিজ্য সম্পর্কিত লেনদেন সম্পাদন করা যায়।
জটিল কোনো মামলার ক্ষেত্রে মানুষ আইনের পরামর্শের জন্য বিদেশের আইনজ্ঞের শরণাপন্ন হয়। কিন্তু এখন আর এজন্য বিদেশে না গেলেও চলবে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে ঘরে বসে যে কোন পরামর্শ লাভ করা যায়।ভ্রমণের ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের অত্যন্ত সহজ পথের সন্ধান এনে দিয়েছে। অফিসের হাজারো ফাইলের মধ্যে থেকে প্রয়োজনীয় ফাইলটি খুঁজে বের করা যায় ইন্টারনেটের Archi পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে।
ইন্টারনেটের সুবাদে ঘরে বসে উন্নত চিকিৎসা লাভ করা যায়। বর্তমানে ব্যাংকের ইন্টারনেট এর বহুল ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। তাছাড়া বিভিন্ন ধরনের খেলা, গান শোনা ও সিনেমা দেখা রান্না শেখা, ফ্যাশন সম্পর্কে জানা এমনকি বিয়ের সম্পর্ক করা যায় ইন্টারনেটের মাধ্যমে। এভাবে ইন্টারনেট বিভিন্ন কাজে এক সহজ মাধ্যম হিসেবে সুযোগ সৃষ্টি করেছে।
বাংলাদেশে ইন্টারনেটের ব্যবহার:-
বাংলাদেশি কম্পিউটারের ব্যবহার শুরু হয়েছে ষাটের দশক থেকে। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে এখানে শতকরা 90 ভাগ কম্পিউটার প্রকাশনার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে টাইপ রাইটারের বিকল্প হিসেবে। সম্প্রতি বাংলাদেশে সম্পৃক্ত হয়েছে আন্তর্জাতিক তথ্য প্রবাহের সাম্রাজ্য ইন্টারনেটের সঙ্গে। 1993 সালের 11 ই নভেম্বর বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহার শুরু হয়।
শুরুর দিকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষা ছাড়াও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের মেইন সার্ভিস দিয়ে আসছিল। 1996 সালের 4 জুন অনলাইন ইন্টার্নেট চালু করে ISN(information service network), এরপর গ্রামীণ সাইবারনেট BDONINE, BRAC BDMAIL, PRADESHTA NET,ই AGNI SYSTEM ইত্যাদি সংস্থাসহ দেশি-বিদেশি অনেকগুলো সংস্থা বর্তমানে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার হিসেবে কাজ করছেন।

0 মন্তব্যসমূহ